
নরসিংদীর সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জীবনে প্রতিদিনের বাস্তবতা—বিপদ আর দুর্ভোগ। নদীঘেরা নয়টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই ইউনিয়নের মানুষের জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি কোনো সড়ক সংযোগ নেই। একটি সেতুর অভাব এখন তাদের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন।
মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরের নরসিংদী শহরে পৌঁছাতে লাগে ৪-৫ ঘণ্টা। কারণ, মেঘনা নদী বেষ্টিত এই এলাকায় একমাত্র যাতায়াত মাধ্যম হলো নৌকা। তারও বড় বাধা—ঘন কচুরিপানা, ঘন কুয়াশা, আর প্রতিকূল আবহাওয়া।
বাখরনগরের বাসিন্দা আহমদ মিয়া (২৫) এখনো কাঁদেন বাবাকে হারানোর কথা মনে করে।
“গত ১০ জানুয়ারি গভীর রাতে বাবার হঠাৎ বুকে ব্যথা ওঠে। কিন্তু নদীজুড়ে কুয়াশা আর কচুরিপানায় কেউ নৌকা চালাতে রাজি হলো না। শেষমেশ ৯০ মিনিটে নদী পার হয়ে হাসপাতালে পৌঁছাই, কিন্তু তখন বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে। ঢাকা রেফার করা হলেও, গেটেই তাঁর মৃত্যু হয়,”—বলেন আহমদ। “একটা সেতু থাকলে হয়তো আজও বাবা বেঁচে থাকতেন।”
আলোকবালী গ্রামের রুবেল আহমেদ (৩২) বলেন, “শহরে যেতে যেখানে এক ঘণ্টা লাগে, সেখানে আমাদের লাগে চার ঘণ্টা। কচুরিপানা আটকে থেকে নৌকা চলতেই পারে না। আর জরুরি হলে তো আর কিছু করারই থাকে না।”
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী ফুলকাম বাদশা বলেন, “আমি নিজেই কচুরিপানায় তিন ঘণ্টা আটকে ছিলাম। আলোকবালী থেকে করিমপুর ইউনিয়নের শ্রীনগর পর্যন্ত ৩০০ মিটার সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
নরসিংদী সদর উপজেলার ইউএনও আসমা জাহান সরকার বলেন, “আমি নিজেই এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। নৌপথে যোগাযোগ খুবই কঠিন। এলাকাবাসী অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সেতু নির্মাণের জন্য প্রশাসন ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
দীর্ঘদিন ধরে সেতুর অভাবে অবরুদ্ধ এই জনপদ থেকে স্থানীয় জনগণ একাধিকবার মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,
“কচুরিপানা সরানো আর সেতু নির্মাণ—এই দুটি দাবি নিয়ে আমরা একাধিকবার মানববন্ধন করেছি। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি।”
অলোকবালীর মানুষরা আজও প্রতিদিন ভয়ে দিন কাটান—জরুরি কোনো বিপদ আসলে হয়তো নদীর পাড়েই তাদের স্বপ্ন থেমে যাবে। একটি সেতু তাদের জীবন বদলে দিতে পারে। তারা শুধু জানতে চান, আর কতদিন অপেক্ষা?