
অসম্ভবকে সম্ভব করলেন ডাক্তাররা— প্রথম চীনে, পরে ভিয়েতনামেও একই কৌশল রোগীর জীবন বদলে দিল।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২০১৩ সালে চিকিৎসাবিশ্বে এক অভূতপূর্ব ঘটনা সবাইকে অবাক করেছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল চীনে। এক ফ্যাক্টরির কর্মী, নাম শিয়ে ওয়েই (Xie Wei), ভয়ংকর দুর্ঘটনায় তার ডান হাত প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
শিয়ে ওয়েইয়ের হাতে আঘাত ছিল ভীষণ জটিল। হাড়, মাংসপেশি, রক্তনালী ও স্নায়ু প্রায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সেই অবস্থায় হাতকে সরাসরি বাহুর সঙ্গে জোড়া দেওয়া সম্ভব ছিল না, কারণ বাহুর কাটা অংশ এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত ছিল যে, সেখানে রক্ত চলাচল সম্ভব হচ্ছিল না। হাতকে ফেলে রাখলে তা সম্পূর্ণরূপে মরে যেত।
হাল ছাড়েননি চিকিৎসকেরা। তাঁরা এক অভিনব সিদ্ধান্ত নেন— বিচ্ছিন্ন হাতটিকে সাময়িকভাবে বাম পায়ের গোড়ালির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে হাতের টিস্যুতে পায়ের রক্তনালীর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ শুরু হয়। হাত জীবিত থাকে, টিস্যু মারা যায় না।
প্রায় ৩০ দিন ধরে শিয়ে ওয়েইয়ের হাত পায়ের সঙ্গে “লটকানো” অবস্থায় ছিল। হাত রক্তসঞ্চালনের কারণে উষ্ণ থাকত, তবে স্নায়ু সংযোগ না থাকায় একেবারেই অনুভূতিহীন ছিল।
শিয়ে ওয়েই পরে বলেন, ওই সময় তার পা কিছুটা ভারী লাগত, তবে তেমন অসুবিধা হয়নি।
এক মাস পর, যখন হাতের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হয়, চিকিৎসকেরা বিশাল এক অপারেশন চালান। এতে –
সবচেয়ে জটিল অংশ— ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র স্নায়ু পুনর্গঠন করা হয়।
অপারেশনের পর হাত ধীরে ধীরে সাড়া দিতে শুরু করে। শিয়ে ওয়েই তার কবজি নড়াতে সক্ষম হন, যদিও আঙুল পুরোপুরি কাজ করছিল না।
এই ঘটনা শুধু চিকিৎসা-সাফল্যের খবর নয়, বরং চিকিৎসকদের সাহসী চিন্তাভাবনার এক প্রতীক। সাধারণ চিকিৎসাপদ্ধতিতে অসম্ভব মনে হওয়া একটি সিদ্ধান্ত কেবল হাতই বাঁচাল না, চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।
সম্প্রতি ভিয়েতনামের এক গর্ভবতী তরুণীর ক্ষেত্রেও একই ধরনের চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়। দুর্ঘটনায় তার হাত কেটে গেলে ডাক্তাররা হাতটিকে সাময়িকভাবে তার পায়ের সঙ্গে জুড়ে দেন, যাতে রক্ত চলাচল বজায় থাকে। পরিকল্পনা ছিল শিশুর জন্মের পর হাতটি আবার বাহুর সঙ্গে জোড়া দেওয়া হবে।
চিকিৎসকদের মতে, চিকিৎসাবিজ্ঞান কেবল নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা নয়, বরং প্রয়োজনে নতুন সমাধান খুঁজে বের করা। এ ধরনের সাহসী ও উদ্ভাবনী সিদ্ধান্তই জীবন রক্ষা করতে পারে।
👉 এ ঘটনা দেখাল, “চিকিৎসাবিজ্ঞান হলো সীমাহীন উদ্ভাবনের ক্ষেত্র”— যেখানে জ্ঞান, সাহস আর সহমর্মিতা একত্রে মিলিত হয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে।