বাংলাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক স্নাতকোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তরের পরে চাকরি পেতে সমস্যার সম্মুখীন হয়। গবেষণায় দেখা যায়, উল্লেখযোগ্য অংশ, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, বেকার থাকে। এই পরিস্থিতির জন্য কয়েকটি কারণ দায়ী, কিন্তু স্নাতকদের সাথে চাকরির বাজারের ফাঁক পূরণের জন্যও সম্ভাব্য সমাধান রয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম প্রায়শই বর্তমান শিল্পের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অনেক কোর্স পুরনো এবং এতে সর্বশেষ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং শিল্প অনুশীলনের সংমিশ্রণ নেই। ফলে, স্নাতকরা প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারছেন না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত শিক্ষণ পদ্ধতি হল মুখস্থ বিদ্যা, যা সৃজনশীল চিন্তাভাবনা, সমস্যার সমাধান এবং বাস্তব প্রয়োগের উপর গুরুত্ব দেয় না। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত করে না।
অনেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে যোগ্য এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। শিক্ষকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির অভাব এবং শিল্প প্রবণতার সাথে সম্পর্কহীনতা এই সমস্যাকে আরও বৃদ্ধি করে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায়শই সীমিত ইন্টার্নশিপ সুযোগ পান, যা বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বোঝার জন্য অপরিহার্য।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্পের মধ্যে সহযোগিতার অভাব রয়েছে, ফলে শিক্ষার সাথে কর্মবাজারের প্রয়োজনের মধ্যে একটি সংযোগ বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়।
অনেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত ক্যারিয়ার পরামর্শ পান না। তারা প্রায়ই বিভিন্ন ক্যারিয়ার পাথ সম্পর্কে অবগত থাকেন না এবং সেগুলোর জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে তা জানেন না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লেসমেন্ট সেলগুলি প্রায়ই পর্যাপ্ত সম্পদ ও পরিকাঠামোর অভাবে কার্যকরভাবে শিক্ষার্থীদের সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাদের সাথে সংযোগ করতে পারে না।
অনেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক যোগাযোগ দক্ষতার অভাবে ভুগছেন, যা তাদের সাক্ষাৎকার এবং পেশাগত পরিবেশে ভাল পারফর্ম করতে বাধা দেয়।
দলগত কাজ, নেতৃত্ব এবং অভিযোজনের মতো দক্ষতা পর্যাপ্তভাবে উন্নত হয় না, যা পরিবর্তনশীল কর্ম পরিবেশে স্নাতকদের সফল হতে বাধা দেয়।
অনেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবার থেকে আসেন এবং তারা অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ বা কোর্স গ্রহণ করতে পারেন না যা তাদের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা উন্নত করতে পারে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির সাথে প্রায়শই একটি সামাজিক নেতিবাচক ধারণা থাকে, যা স্নাতকদের আত্মবিশ্বাস এবং নিয়োগকর্তার দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাব ফেলে।
পাঠ্যক্রম নিয়মিতভাবে আপডেট করা উচিত যাতে শিল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোর্স এবং সর্বশেষ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
পাঠ্যক্রমে দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া উচিত, যেমন প্রকল্প, কেস স্টাডি এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা যা তত্ত্ব এবং প্রয়োগের মধ্যে ফাঁক পূরণ করতে পারে।
শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন কর্মসূচি প্রয়োগ করা উচিত যাতে তারা শিল্প প্রবণতা এবং কার্যকর শিক্ষণ পদ্ধতির সাথে আপডেট থাকে।
ইন্টারঅ্যাকটিভ লার্নিং পদ্ধতিগুলিকে উৎসাহিত করা উচিত যেমন দলগত আলোচনা, সমস্যার সমাধান সেশন এবং ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে সৃজনশীল চিন্তাভাবনার বিকাশ।
শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং নেটওয়ার্কিং সুযোগ প্রদান করতে শিল্পের সাথে সহযোগিতায় শক্তিশালী ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম তৈরি করা উচিত।
শিক্ষার্থীদের বাস্তব প্রকল্প, অতিথি বক্তৃতা এবং জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ প্রদান করতে শিল্পের সাথে শক্তিশালী সহযোগিতা তৈরি করা উচিত।
ক্যারিয়ার পরামর্শ সেবা প্রতিষ্ঠা করা উচিত যাতে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত ক্যারিয়ার পাথ বাছাই এবং কার্যকরভাবে তার জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করতে পারে।
প্লেসমেন্ট সেলের পরিকাঠামো এবং সম্পদে বিনিয়োগ করা উচিত যাতে তারা শিক্ষার্থীদের সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাদের সাথে সংযোগ করতে সক্ষম হয়।
নিয়মিত কর্মশালা পরিচালনা করা উচিত যাতে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও বাংলায় যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত হয়।
দলগত কাজ, নেতৃত্ব এবং অভিযোজনের উপর জোর দিয়ে সফট স্কিল প্রশিক্ষণ পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ এবং সম্পদ অ্যাক্সেস করতে সহায়তা করতে আর্থিক সহায়তা প্রোগ্রাম সম্প্রসারণ করা উচিত।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির মূল্য সম্পর্কে সামাজিক ধারণা পরিবর্তন করতে সচেতনতা প্রচারাভিযান চালানো উচিত, যাতে সফল প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং অর্জনসমূহ তুলে ধরা যায়।
বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান উন্নয়ন একটি সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োজন, যা শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি, বাস্তব অভিজ্ঞতা সুযোগ বৃদ্ধি, উন্নত ক্যারিয়ার নির্দেশনা প্রদান এবং প্রয়োজনীয় সফট স্কিল উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেয়। এই সমাধানগুলো বাস্তবায়ন করলে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের কর্মবাজারের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারবে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।