
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগ এবং ক্ষোভ সামাজিক মাধ্যমে বারবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। কিন্তু বাস্তবে কী ঘটছে? এই অভিযোগের পিছনের সত্যতা কী? চলুন সহজভাবে বিষয়টি বুঝে নিই।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনালে বিদেশী বিনিয়োগ নতুন কিছু নয়। বর্তমানে সিঙ্গাপুরের পোর্ট অথোরিটি, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং ডেনমার্কের এপি মোলার বিনিয়োগে আগ্রহী। তবে বর্তমান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (NCT), যা বন্দরটির সবচেয়ে বড় টার্মিনাল হলেও পুরো বন্দর নয়।
এতদিন NCT পরিচালনা করছিলো দেশীয় প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক, যা বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত ছিল। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘ সময় ধরে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে আসছে, যার প্রভাব পড়েছে বন্দরের স্বচ্ছতা ও দক্ষতার ওপর।
সরকার এখন NCT-তে বিদেশী অপারেটর আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে সাইফ পাওয়ারটেকের একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ হতে যাচ্ছে। এতে কিছু মহল ক্ষুব্ধ হয়ে বন্দর বিদেশীদের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করছে। কিন্তু বাস্তবে এটি বিক্রি নয়, বরং একটি অপারেটর হিসেবে বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া।
সাইফ পাওয়ারটেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা বছরের পর বছর উচ্চমূল্যে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে আসছে এবং তাদের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, তাদের ৫১৮ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে, যা আদায়ের জন্য সম্পত্তি নিলামে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিদেশী অপারেটররা সারা বিশ্বে বিভিন্ন বন্দরে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এপি মোলার ৩৬টি দেশে ৬৫টি পোর্ট পরিচালনা করে, ডিপি ওয়ার্ল্ড ১৫০টি ইউনিটে কাজ করে, আর পোর্ট অফ সিঙ্গাপুর অথোরিটি ৪৫টি দেশে ৭৩টি টার্মিনাল পরিচালনা করে। তাহলে বাংলাদেশে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর আসা কি অস্বাভাবিক?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসল ক্ষোভের কারণ সাইফ পাওয়ারটেকের দীর্ঘদিনের একচেটিয়া লাভজনক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়া। যারা এই পরিবর্তনের বিরোধিতা করছেন, তারা মূলত তাদের রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছেন।
বন্দর পরিচালনায় বিদেশী অপারেটর আসলে একচেটিয়া দুর্নীতি কমবে এবং পরিচালনা হবে আরও দক্ষভাবে। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে, কিন্তু তাদেরও স্বচ্ছ হতে হবে।
#চট্টগ্রামবন্দর #বিদেশীঅপারেটর #সাইফপাওয়ারটেক #বন্দরদুর্নীতি #বাংলাদেশঅর্থনীতি